ঢাকা ০৭:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারখানার ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে আমনের ক্ষেত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ১৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ট্রিলিয়ন গোল্ড লিমিটেড’র চুল পুড়ানোর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও রাসায়নিক বর্জ্যমিশ্রিত পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে অর্ধশত একক জমির আমন ধান নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে ওই এলাকার কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের দেবীগঞ্জ বাজারের সামনে অবস্থিত ট্রিলিয়ন গোল্ড লিমিটেডের প্রতিদিনের চুল পুড়ানোর কালো ধোঁয়ায় উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের রাজাপাড়া, পাইকার পাড়া ও ফকির পাড়া গ্রামের মানুষের প্রায় অর্ধশত একর কৃষি জমির ফসল হলুদ হয়ে গেছে। এদিকে বিষাক্ত বর্জ্যের ফলে সেই এলাকার মৎস্য খামার মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ট্রিলিয়ন গোল্ড চুল কারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে ময়লা পানি ড্রেনে ছাড়ার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না কর্তৃপক্ষ, করেনি কোন ব্যবস্থাও। কালো রঙের বিষাক্ত পানি আশপাশের গ্রামের খাল-বিল ও পুকুরে প্রবাহিত হয়ে পরিবশে দূষিত করছে। আর চুল পুড়ানোর কালো ধোঁয়ায় হলুদ হয়ে যাচ্ছে আমন ক্ষেত।

ওই এলাকার কৃষক মুসলিম উদ্দিন বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি, ধান পেটে আসতে না আসতেই ধানের গাছ হলুদ হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় পুড়ে কালো হয়ে গেছে। চুল কারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া এভাবে ধানের গাছে এসে লাগলে ধান হওয়ার আগেই গাছ মরে যাবে।

মুসলিম উদ্দিনের মত জিন্নাত আলী, শাহীনুর ইসলাম, সোহাগ ইসলামসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন, চুল কারখানার বর্জ্য ও কালো ধোঁয়া বন্ধ না হলে এই এলাকার মাটি চাষাবাদের অনপোযোগী হয়ে পড়বে। হারিয়ে যাবে জমির উর্বরতা।

স্কুল শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘কারখানায় প্রায় প্রতিদিনই বিকেলে চুল পুড়ানো হয়। আর এর ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আমন ক্ষেতসহ বাড়ির গাছপালা শাক-সবজির গাছ নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া দূষিত বর্জ্যে খাল বিল পুকুরের পানি কালো হয়ে যাচ্ছে।

ফতেজংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ লুনার বলেন, কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধন করে ময়লা পানি বাইরে ছাড়ার কথা তাদেরকে বার বার বলা হলেও তারা কালক্ষেপণ করে উড়িয়ে দিচ্ছে। তেমন কোন রকম ব্যবস্থাও তারা কারখানায় করেনি। চুল পুড়ানোর ধোঁয়ায় ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। তারা না শুনলে আমি আর কি করতে পারি।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, সবার আগে কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। চুল কারখানার পানি নিষ্কাশন ও বিষাক্ত ধোঁয়ার অন্য কোন মাধ্যম অবশ্যই তৈরি করতে হবে। ধান গাছের সবুজ অংশ চারাকে বাঁচিয়ে রাখে। চারা হলুদ হয়ে গেলে ওই গাছকে সবল করা মুশকিল হয়ে পড়বে।

এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দীকা বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি সরেজমিনে গিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কারখানার ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে আমনের ক্ষেত

আপডেট টাইম : ০৬:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ট্রিলিয়ন গোল্ড লিমিটেড’র চুল পুড়ানোর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও রাসায়নিক বর্জ্যমিশ্রিত পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে অর্ধশত একক জমির আমন ধান নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে ওই এলাকার কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের দেবীগঞ্জ বাজারের সামনে অবস্থিত ট্রিলিয়ন গোল্ড লিমিটেডের প্রতিদিনের চুল পুড়ানোর কালো ধোঁয়ায় উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের রাজাপাড়া, পাইকার পাড়া ও ফকির পাড়া গ্রামের মানুষের প্রায় অর্ধশত একর কৃষি জমির ফসল হলুদ হয়ে গেছে। এদিকে বিষাক্ত বর্জ্যের ফলে সেই এলাকার মৎস্য খামার মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ট্রিলিয়ন গোল্ড চুল কারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে ময়লা পানি ড্রেনে ছাড়ার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না কর্তৃপক্ষ, করেনি কোন ব্যবস্থাও। কালো রঙের বিষাক্ত পানি আশপাশের গ্রামের খাল-বিল ও পুকুরে প্রবাহিত হয়ে পরিবশে দূষিত করছে। আর চুল পুড়ানোর কালো ধোঁয়ায় হলুদ হয়ে যাচ্ছে আমন ক্ষেত।

ওই এলাকার কৃষক মুসলিম উদ্দিন বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি, ধান পেটে আসতে না আসতেই ধানের গাছ হলুদ হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় পুড়ে কালো হয়ে গেছে। চুল কারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া এভাবে ধানের গাছে এসে লাগলে ধান হওয়ার আগেই গাছ মরে যাবে।

মুসলিম উদ্দিনের মত জিন্নাত আলী, শাহীনুর ইসলাম, সোহাগ ইসলামসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন, চুল কারখানার বর্জ্য ও কালো ধোঁয়া বন্ধ না হলে এই এলাকার মাটি চাষাবাদের অনপোযোগী হয়ে পড়বে। হারিয়ে যাবে জমির উর্বরতা।

স্কুল শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘কারখানায় প্রায় প্রতিদিনই বিকেলে চুল পুড়ানো হয়। আর এর ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আমন ক্ষেতসহ বাড়ির গাছপালা শাক-সবজির গাছ নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া দূষিত বর্জ্যে খাল বিল পুকুরের পানি কালো হয়ে যাচ্ছে।

ফতেজংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ লুনার বলেন, কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধন করে ময়লা পানি বাইরে ছাড়ার কথা তাদেরকে বার বার বলা হলেও তারা কালক্ষেপণ করে উড়িয়ে দিচ্ছে। তেমন কোন রকম ব্যবস্থাও তারা কারখানায় করেনি। চুল পুড়ানোর ধোঁয়ায় ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। তারা না শুনলে আমি আর কি করতে পারি।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, সবার আগে কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। চুল কারখানার পানি নিষ্কাশন ও বিষাক্ত ধোঁয়ার অন্য কোন মাধ্যম অবশ্যই তৈরি করতে হবে। ধান গাছের সবুজ অংশ চারাকে বাঁচিয়ে রাখে। চারা হলুদ হয়ে গেলে ওই গাছকে সবল করা মুশকিল হয়ে পড়বে।

এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দীকা বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি সরেজমিনে গিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।